বর্তমানে আমাদের কাছে থাকা স্মার্টফোনে কিংবা ল্যাপটপে দিন, সময় এবং প্রয়োজনীয় কাজগুলো স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত অ্যাপস্ বা অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে। এইসব প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে আমাদের কাছে সময় ব্যাপারটা অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে কারণ আমাদের দেহঘড়ি বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে। আচ্ছা, আজকে কি শুক্রবার? আমিতো ভাবলাম মঙ্গলবার!
আপনার কি মনে হচ্ছে, এর জন্য কাজে মনোযোগী হওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে? আপনার কাজ-কর্ম সম্পাদনে কি আগের চেয়ে বেশি সময় লাগছে? আমাদের মস্তিষ্ক কি এই কোভিড-১৯ মহামারীতে ধীর গতিতে কাজ করছে?
সময়ের গতি পথ থেকে দূরে সরে যাবার পিছনে মনোবিজ্ঞানঃ
সান ফ্রান্সিসকো এর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এলিসা ইপেল জনপ্রিয় সামাজিক গণমাধ্যম ‘সিএনএন’- কে বলেন, “এটি পরিবেশের পরিবর্তন, আর্থ-সামাজিক ক্ষতি এবং জ্ঞানের বা চিন্তাভাবনার চাপ বৃদ্ধি এসবকিছুর মধ্যকার একটি নিখুঁত সমস্যা। অন্যদিকে দেখা যায় যে, আগের মত আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাচ্ছি না।” সাধারণত আমাদের দেহ শারীরিক ও সামাজিক কার্যক্রমের উপর নির্ভর করে। যেমনঃ কর্মস্থল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়া ইত্যাদি। এসব দৈনন্দিন রুটিনগুলো আমাদের সময়কে একটি নির্দিষ্ট গতিপথ বা ট্র্যাকে রাখে কিন্তু সেগুলো বর্তমানে অদৃশ্য হয়ে গেছে।
অধ্যাপক ইপেল আরও বলেন, “আমরা আমাদের একটি সাধারণ সপ্তাহের সমস্ত রুটিন হারিয়ে ফেলেছি। তার মানে সপ্তাহান্ত বা উইকেন্ড যা একটি সপ্তাহের বাউন্ডারি হিসেবে কাজ করতো তাই এখন অদৃশ্য হয়ে গেছে। এখন উইকেন্ড আর সপ্তাহের বাকি দিন গুলো সবই সমান।”
আমেরিকান সাইকোলোজিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের অনুশীলন গবেষণা এবং নীতিমালা নির্রধারণের সহযোগী নির্বাহী পরিচালক লিন বুফকা বলেন, “যখন আমাদের দৈনন্দিন রুটিন গুলো ঠিকঠাক ছিল তখন কিন্তু আপনি সত্যিই সেদিন কি কি ঘটবে সেই জিনিস গুলো নিয়ে ভাবতেন না। সুতরাং এখন এমন অলস সময়টা আপনার কাছে ক্লান্তিকর হতে পারে। আজকের দিনে কি ঘটবে সে ব্যাপারে ভাবা ছাড়া আপনার মাথায় তখন দ্বিতীয় কোনো ধারণা তৈরী হবে না।”
আরেকটি কারণ হল আমরা প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো দায়িত্বে নিয়োজিত থাকি। যেমনঃ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাচ্চাদের ঘরে লেখাপড়া করানো, তাদের যত্ন নেয়া ইত্যাদি। অধ্যাপক ইপেল আরও বলেন, “আমাদের কাজের স্মৃতি সীমিত। আমরা একসাথে অনেক কাজে নিয়োজিত থেকে বা মাল্টিটাস্কিং করে নিজেকে ও নিজের মনকে ব্যস্ত রাখতে পারি।”
এই কারণে আমাদের বিভিন্ন কাজের ডিটেইলস বা বিশদ জানতে কিংবা কাজের কার্যকারিতা সম্পাদন করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন পড়ছে। আমেরিকার নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান এবং আচরণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইনগার বারনেট-জেইগলার বলেন, ” যখন মানুষ মাল্টিটাস্ক করার চেষ্টা করছে তখন তাদের সামনে থাকা তথ্যগুলো এনকোড করা আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। পরবর্তীতে সেই তথ্যগুলো সংরক্ষণ করা হয় না ফলে কিছুক্ষণ আগেই তারা কি বলেছে কিংবা কি করেছে তা তারা মনে রাখতেও পারছে না।”
শুক্রবারকে রবিবার ভেবে ভুল করা- এটি ঘুমের ধরন পরিবর্তন হওয়াতে স্ট্রেসের লক্ষণও হতে পারে। প্রফেসর বারনেট-জেইগলার আরও বলেন, “যখন আপনি মাঝেমধ্যে স্ট্রেস বা উদ্বেগ বোধ করেন তখন আপনার মস্তিষ্কে সেই চিন্তা এবং অনুভূতিগুলো দেখা দেয় এবং সুনিদ্রায় বাধা প্রদান করে।
বিশেষজ্ঞরা যতটা সম্ভব একটি স্বাভাবিক রুটিন এবং ছন্দ বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। কিছু স্ট্র্যাটেজি মানতে বলা হয়েছে। যেমনঃ নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো এবং ঘুম থেকে জেগে ওঠা, শারীরিক অনুশীলন করা, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রিয়জনের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা, ফোনে ম্যাসেজ কিংবা কল করা, পাশাপাশি বিভিন্ন সংবাদ সম্পর্কে অবগত হওয়া এবং মনিটরে ব্যয় করা সময়কে সীমিত করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
রাদিয়া আহমেদ লুবনা/ নিজস্ব প্রতিবেদক